দাউদ রোগ ভালো করার উপায়

দাউদ অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি তাই দাউদ রোগ ভালো করার উপায় সবারই জেনে রাখা অতি জরুরী। অনেকেই দাউদ রোগ ভালো করার উপায় জানেন না। যদি না জেনে থাকেন তবে দাউদের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য দাউদ রোগ ভালো করার উপায়সমূহ এই পোস্টটি থেকে জেনে নিতে পারেন। অতএব মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে ফেলুন।

পেজ সূচিপত্রঃ দাউদ একটি অতি পরিচিত ফাংগাল ইনফেকশন। শরীরের বিভিন্ন স্থান যেমন: হাত, পা, পিঠ, তালু ইত্যাদিতে গোল গোল দাগ হয়ে দাউদ সংক্রমিত হতে দেখা যায়। এটি খুব সহজে আরেক দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক চুলকানি সৃষ্টি করে। 

এই পোস্ট থেকে আপনারা দাউদ কেন হয়, দাউদ রোগ ভালো করার উপায়, দাউদ রোগ ভালো করার ওষুধের নাম কি ইত্যাদি অতি দরকারী বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। 

দাউদ কেন হয়?

দাদ হচ্ছে এক ধরনের ছত্রাক। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই ছত্রাকটি আমাদের দেহের সংক্রমিত হয়ে দাউদের সৃষ্টি করে। দাউদ রোগ এতটাই ছোঁয়াতে যে কেউ দাউদ রোগীর সংস্পর্শে গেলে তারও দাউদ হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে। 

দীর্ঘদিন কাপড়-চোপড় না ধুয়ে পড়লে সেখানে ছত্রাক সৃষ্টি হয় ফলে সেই ছত্রাক থেকে দাউদ আক্রান্ত হতে পারে। 

আটোসাটো কাপড়-চোপড় ও অন্তর্বাস ব্যবহার করলে দাউদ রোগ হয়ে থাকে। তাই দাউদ রোগের মূলে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকর ছত্রাক।

সুতরাং দাউদ রোগ ভালো করার উপায় হিসেবে দাউদ যেসকল ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হয় তা যেন শরীরের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা খুব সহজেই দাউদ রোগে আক্রান্ত হয়। 

সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জীবন যাপন না করলে দাউদ রোগ দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। দাউদ রোগের চুলকানির কারণে শরীরে ঘা সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে ঘাম বেশি হলেও দাউদ হয়।

দাউদ রোগ ভালো করার উপায়সমূহ | কিভাবে দাউদ রোগ ভালো হয়

দাউদ অতি পরিচিত একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই রোগটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। তাই দাউদ হলে অবহেলা না করে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে দাউদ রোগ ভালো করা সম্ভব। চলুন দাউদ রোগ ভালো করার উপায়সমূহ এবার জেনে নিই।
  • অ্যালোভেরা: সকল প্রকার ফাংগাল ইনফেকশন দূর করে ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনে অ্যালোভেরা বেশ কার্যকরী উপাদান। রাতে শুতে যাওয়ার আগে অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে সেটি দাউদের উপর সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে জায়গাটি ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই দাউদ ভালো হয়ে যাবে। 
  • নিমপাতা: নিমপাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান দাউদসহ অন্যান্য ছোঁয়াচে চর্মরোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। দাউদ আক্রান্ত স্থানে নিমপাতার তেল মালিশ করতে পারেন। দেখবেন দাউদ ধীরে ধীরে কমে যাবে। 
  • পেঁপে: দাউদের প্রকোপ কমাতে পেঁপেও কিন্তু দারুণ ভূমিকা পালন করে। পেপেতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুনাগুন যা দাউদ প্রতিরোধে কার্যকর। পেঁপের ছোট ছোট করে কেটে দাউদের উপর লাগাতে পারেন। তাহলে খুব দ্রুতই উপকার পাবেন। 
  • রসুন: রসুনে এ্যাজাইনা নামক একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা যেকোনো ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে। তাই রসুন ভালোভাবে ছিলে,  ছোট ছোট করে কেটে তা ব্যান্ডেজ এর মাধ্যমে আক্রান্ত দাউদের স্থানে লাগিয়ে দিন। কিছুদিন এভাবে করতে থাকলে আস্তে আস্তে দাউদ সেরে যাবে। 
  • নারকেল তেল: নারকেল তেলের মাইক্রোবিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। এটি দাউদের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী হতে পারে। একটি পাত্রে নারিকেল তেল গরম করে নিয়ে সেই তেল সরাসরি আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। দিনে অন্তত দুইবার এই কাজটি করতে থাকুন। ত্বক দ্রুতই তেল শুষে নিয়ে দাউদ প্রতিরোধ করবে। 
  • অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার: অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার সম্পূর্ণ ফাঙ্গাস প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে থাকে। দিনে কয়েকবার তুলোতে ভিনেগার ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। দাদের দাগ মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এ প্রকৃয়া চলমান রাখুন। 
  • সাবান পানি: ক্ষারের পানি অ্যান্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন আক্রান্ত স্থান সাবান পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই দাউদ কমতে শুরু করবে।

দাউদ রোগ ভালো করার ওষুধের নাম কি 

প্রিয় বন্ধুরা ইতিমধ্যে আপনারা দাউদ রোগ ভালো করার উপায়সমূহ বিস্তারিত জেনে ফেলেছেন। দাউদের সংক্রমণ বেশি হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কিছু ওষুধ সেবন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এবার চলুন দাউদ রোগ ভালো করার ওষুধের নামগুলো জেনে নিই।
  • দাদের সংক্রমণ বেশি হয়ে গেলে ডাক্তাররা সাধারণত তিন মাস মেয়াদী এই অ্যান্টি-ফাঙ্গাল  ওষুধগুলো সেবন করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন: গ্রিসেয়োফালভিন, টারবিনাফিন, ইট্রাকোনাজল, ফ্লুকোনাজোন।
  • বেশি চুলকানি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। 
  • মাত্রাতিরিক্ত দাউদের সমস্যা দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ যেমন: এজিথ্রোমাইসিন, ফ্লুক্লক্সাসিলিন, সেটিরিজিন, Alatrol ইত্যাদি সেবন করা যেতে পারে।

দাউদ রোগ হলে কোন মলম ব্যবহার করবেন

দাউদ রোগ ভালো করার উপায়সমূহ অনুসরণ করার পরেও যদি দাউদ নির্মূল না হয় তবে দাউদ দূর করার জন্য কিছু মলম ব্যবহার করতে পারেন। এসব মলম আপনি খুব সহজেই বাজারে পেয়ে যাবেন। চলুন দাউদ রোগ দূর করার মলমসমূহের নাম জেনে নেওয়া যাক।
  • দাউদ রোগের জন্য সবচেয়ে ভালো মলম গুলো হলো: হুইল ফিল্ড ডারোমিন, ব্রাক, রিংগার্ড ইত্যাদি। 
  • দাউদের জন্য বেশ কার্যকরী আরো কিছু ক্রিম বা মলমের নাম হলো: ইকোনাজল, মাইকোনাজল, ফুলুকোনাজল, টারবিনাফিন, ফাঙ্গিসন ক্রিম ইত্যাদি। 
  • এছাড়াও অক্সিফান লোশন, লিউলিজল ক্রিম, ফাঙ্গিডাল ক্রিম প্রভৃতি নিয়ম মোতাবেক ব্যবহার করলে দাউদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 

উপসংহার - দাউদ রোগ ভালো করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনারা দাউদ রোগ ভালো করার উপায় এবং দাউদ রোগ প্রতিরোধে কি কি ক্রিম ও ঔষধ ব্যবহার করবেন তা জেনে ফেলেছেন। 

দাউদ যেহেতু সংক্রামক রোগ তাই সর্বোপরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সহজেই দাউদ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। পোস্টটি উপকারে আসলে এখনই শেয়ার করে ফেলুন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নিত্য-নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url