জাম্বুরা উপকারিতা - জাম্বুরা in english
জাম্বুরা উপকারিতা - জাম্বুরা in english: ভূমিকা
আমাদের সকলের পরিচিত একটি ফল হলো জাম্বুরা। এ ফলটি আমরা সকলেই কমবেশি পছন্দ করে থাকি। জাম্বুরা একটি মৌসুমী ফল এবং খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জাম্বুরা উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এছাড়া এখান থেকে আপনারা আরো জানতে পারবেন জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা, জাম্বুরা খাওয়ার অপকারিতা, জাম্বুরা চাষ পদ্ধতি, জাম্বুরা in english, জাম্বুরার ছবি সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।
জাম্বুরা উপকারিতা - জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল হচ্ছে জাম্বুরা। জাম্বুরা খাওয়ার আগে আমাদেরকে জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম হাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান সমূহ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপনাদের সুবিধার্থে জাম্বুরা উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো।
জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে -- জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপনি যদি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে জাম্বুরা খেতে পারেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে -- জেনে রাখুন যে জাম্বুরা একটি ফাইবার যুক্ত ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আশ যা আমাদের খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আপনার যদি সমস্যা থাকে তাহলে আপনি জাম্বুরা খেতে পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে -- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ওজন কমাতে জাম্বুরার অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে আঁশ আজ এবং এটি একটি ফাইবার যুক্ত ফল যা আমাদের দেহে চর্বি জমতে বাধা প্রদান করে। ওজন কমাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে -- জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি এক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। এছাড়া জাম্বুরায় থাকা প্রাকৃতিক ভিটামিন এ ফুসফুস এবং মুখ্য হব ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে -- জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম যা আমাদের হাড়গুলোকে মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আপনি যদি আপনার হার মজবুত করতে চান তাহলে নিয়মিত জাম্বুরা খেতে পারেন।
রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে -- আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে জাম্বুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাম্বুরার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ধমনী আয়তন বৃদ্ধি করে রক্ত সঞ্চালন পথকে সুগম করে ফলে দেহের সকল স্থানে রক্ত সহজে পৌঁছে যায়।
ক্লান্তি দূর করতে -- আমরা অনেক সময় ক্লান্তি দূর করতে বিভিন্ন রকম উপায় অবলম্বন করি কিন্তু কিছুতেই কোনরকম কাজ হয় না। আপনি যদি ক্লান্তি দূর করতে চান তাহলে জাম্বুরা খেতে পারেন। প্রতিদিন যদি এক গ্লাস করে জাম্বুরার জুস খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করবে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী -- গর্ভবতী নারীদের জন্য জাম্বুরা অনেক উপকারী একটি ফল। জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে এবং ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই গর্ভবতী নারীরা নিয়মিত পরিমাপ মতো জাম্বুরা খেতে পারেন।
হৃদরোগ থেকে মুক্তি দিতে -- জাম্বুরা হৃদরোগের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। জাম্বুরায় রয়েছে পটাশিয়াম যার রক্তচাপ কমায় এবং আমাদের হৃদযন্ত্র কে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার হৃদরোগ দূর করতে চান এবং এখান থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে জাম্বুরা খেতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে -- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে যে সকল উপাদান গুলো প্রয়োজন সে সকল উপাদানগুলো জাম্বুরার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আপনি যদি আপনার দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত জাম্বুরা খেতে পারেন।
বয়সের ছাপ দূর করতে -- অনেক সময় আমাদের অল্প বয়সেই চোখে মুখে বয়সের ছাপ ফুটে ওঠে। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান এবং চোখে মুখে বয়সের ছাপ দূর করতে চান তাহলে নিয়মিত জাম্বুরা খেতে পারেন।
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে -- জাম্বুরা দাঁত এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি যা দাঁতের ব্যথা এবং মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
জাম্বুরা খাওয়ার অপকারিতা
জাম্বুরা উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। যে জিনিসের উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমন জাম্বুরা খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। জাম্বুরা সম্পর্কে যে সকল বিষয়গুলো জানতে হবে তার মধ্যে জাম্বুরা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত।
এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আসে যার শরীরের যে কোন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই যদি অতিরিক্ত পরিমাণে জাম্বুরা খাওয়া যায় তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে কোন চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। যদি খেতে মন চায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
জাম্বুরা খাওয়াতে অনেকের মধ্যে এলার্জি হয়। জাম্বুরার মধ্যে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে সাধারণত তাদের জাম্বুরা খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি ওষুধ গ্রহণ করে তার জন্য জাম্বুরার রস ক্ষতিকর। জাম্বুরা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
জাম্বুরা চাষ পদ্ধতি
জাম্বুরা অর্থাৎ আমরা বাংলায় যেটাকে বাতাবি লেবু বলে থাকি। জাম্বুরা চাষ করে অনেক চাষিরা এখন লাভবান হচ্ছে। সেজন্য অনেকেই জাম্বুরা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়। আমরা যদি জাম্বুরা চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে সঠিকভাবে চাষ করতে পারি তাহলে এটি ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
মাটি ও জলবায়ু -- হালকা দো-আঁশ থেকে পলি দো-আঁশযুক্ত, সুনিষ্কাশিত ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি বাতাবি লেবু চাষের জন্য উত্তম। তবে মধ্যম অমস্নীয় মাটিতে এটি ভালো জন্মে। বাংলাদেশের জলবায়ু বাতাবি লেবু চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জমি নির্বাচন ও তৈরি -- বাতাবি লেবুর চারা রোপণের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমতল ও আগাছামুক্ত করে চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে।
বংশ বিস্তার -- গুটি কলম, জোড় কলম ও চোখ কলমের সাহায্যে বংশবিসত্মার করা হয়। সাধারণত ৮-১০ মাস বয়সের বাতাবি লেবুর চারা বডি ও গ্রাফটিংয়ের জন্য আদিজোড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোপণের জন্য সোজা ও দ্রুত বৃদ্ধি সম্পন্ন চারা বা কলম রোপণ করা হয়।
রোপণ পদ্ধতি -- সমতল জমিতে বর্গাকার অথবা আয়তাকার পদ্ধতি অথবা পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে বাতাবি লেবুর চারা রোপণ করা হয়। মধ্য জ্যৈষ্ঠ-আশ্বিন অর্থাৎ জুন-সেপ্টেম্বর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
সার প্রয়োগ -- প্রতি গর্তে জৈব সার ১০-১৫ কেজি, টিএসপি-২৫০ গ্রাম এবং এমপি ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। সারগুলো ভালো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বিভিন্ন বয়সের গাছের জন্য সারের মাত্রা পরবর্তী পৃষ্ঠায় দেয়া হলো।
আগাছা দমন -- গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হবে। কারণ এরা খাদ্য ও পানি গ্রহণে অংশীদার হয় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত করে। চারা রোপণের পর প্রথম দিকে গাছের গোড়ার মাটি ঝুরঝুরে রাখলে নতুন চারা দ্রুত বাড়তে পারে। তাই সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে হালকাভাবে কুপিয়ে জমির চটা ভেঙে দিতে হবে। এতে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং গাছ সহজে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
পানি সেচ -- ফুল আসা ও ফল ধরার সময় পানির অভাব হলে ফল ঝরে পড়ে। চারা লাগানোর সময়, সার দেয়ার পর এবং খরার সময় ১০-১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। বাতাবি লেবু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বিধায় বৃষ্টিতে ও বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য নালা করে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা -- আক্রানত্ম শাখা কেটে ফেলে অথবা আক্রান্ত অংশ চেঁছে ফেলে বর্দোপেস্ট বা ম্যাক্রপ্যাঙ পেস্টের মতো করে লাগাতে হবে। গাছকে সবসময় সবল ও সতেজ রাখতে হবে। স্যাঁতসেঁতে মাটি, অতিরিক্ত সেচ এবং জলাবদ্ধতা পরিহার করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা ও সেচের পানি গাছের কাণ্ড স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখা ভালো।
জাম্বুরা in english
জাম্বুরা in english কি এ প্রশ্নটি অনেক শোনা যায়। জাম্বুরা in english কি বলা হয় তা জেনে নিন। জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু বা তুরুনজা এক প্রকার লেবু জাতীয় টক-মিষ্টি ফল। এর ইংরেজি নাম Pomelo এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrus maxima বা Citrus grandis. বিভিন্ন ভাষায় এটি পমেলো, জাবং, শ্যাডক ইত্যাদি নামে পরিচিত। বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় একে ছোলমও বলা হয়।
জাম্বুরার ছবি
আমরা অনেকেই জাম্বুরা চিনি না। যার ফলে জাম্বুরার ছবি দেখতে চায়। আপনি যদি সঠিকভাবে জাম্বুরা চিনতে চান তাহলে জাম্বুরার ছবি আপনার জন্য নিচে উল্লেখ করা হলো।
ছবিঃ দৈনিক জনগণ
জাম্বুরা উপকারিতা - জাম্বুরা in english: উপসংহার
জাম্বুরার উপকারিতা ও অপকারিতা, জাম্বুরা খাওয়ার অপকারিতা, জাম্বুরা চাষ পদ্ধতি, জাম্বুরা in english, জাম্বুরার ছবি, জাম্বুরা উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url