জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন
জ্বর ঠোসার কারণ
জ্বর ঠোসা একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই জানতে হবে জ্বর ঠোসা হলে কি করা উচিত। এই রোগ হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে এটাই জ্বর ঠোসা হওয়ার কারণ। মানুষের ঠান্ডা এবং জ্বর হলে সাধারনত এই জ্বর ঠোসা বের হয়। সাধারণত ভাইরাস HSV-1 এবং HSV-2 হল অত্যন্ত সংক্রামক এবং যৌন মিলনের মাধ্যমে এটা ছড়ায় তাই জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন নেওয়া উচিত।
- জ্বর ঠোসা আছে এমন ব্যক্তির মুখ বা মুখের লালার সংস্পর্শে আসলে এটা হতে পারে কারণ জ্বর ঠোসা একটা ছোঁয়াচে রোগ
- তারপর জ্বর ঠোসা হাত দিয়ে ছুয়ে সেই হাত অন্য কারো মুখে সেই হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তাদের জ্বর ঠোসা হতে পারে
- জ্বর ঠোসা আছে এমন কেও যদি তার মুখ দিয়ে কারো যৌনাঙ্গে মুখ দেয় তাহলে তারও জ্বর ঠোসা হতে পারে
এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পরে একজন ব্যক্তির যেসব লক্ষণ থাকতে পারেঃ
- ফ্লু মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে
- মুখের মধ্যে বা চারপাশে বা তাদের নাকের মধ্যে ঘা হতে পারে
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের চারপাশে ঘা হতে পারে
জ্বর ঠোসায় কালশিটে ভাব সাধারণত ১-২ সপ্তাহ থাকতে পারে এটা খুব জটিল না হলে চিকিত্সা ছাড়াই, শরীরের ইমিউন সিস্টেম এই ভাইরাসকে দমন করতে পারে। কিন্তু ভাইরাস শরীর ছেড়ে যায় না এবং যদিও এটি বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে থাকে। তবে জ্বর হলে এটি অনেক সময় আবার হতে পারে।
জ্বর ঠোসা রোগ নির্ণয়
বার বার জ্বর ঠোসায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা লক্ষণগুলি চিনতে পারবেন এবং জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন ব্যবহার করে জ্বর ঠোসা সারানোর ঘরোয়া উপায় এ সেগুলো ঠিক করতে পারেন। একজন ডাক্তার দেখানো উচিত যদি আপনার নিচের লক্ষণ গুলো থাকেঃ
- লক্ষণগুলি গুরুতর হলে
- জ্বর ঠোসা যা ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়না
- মাড়ি ফুলে যায়
- যাদের শরীরে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম আছে
- আরো অন্যান্য উপসর্গ আছে যা টেনশন সৃষ্টি করে
একজন চিকিত্সক সাধারণত লক্ষণগুলি দেখে এবং পরীক্ষা করে সমস্যাটি নির্ণয় করতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন ব্যক্তির দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে তাদের এই রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে পারে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এমন কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে এইচআইভি, কিছু ধরনের ক্যান্সার এবং কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসা।
জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন বা চিকিৎসা
বেশিরভাগ জ্বর ঠোসা ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিত্সা ছাড়াই সমাধান হয়ে যায়। যাইহোক কিছু ওষুধগুলি জ্বর ঠোসা তাড়াতাড়ি ভালো করতে পারে এবং অস্বস্তি ও ব্যথা কমাতে পারে যদিও ওষুধগুলি শরীর থেকে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারেনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর ঠোসার প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিত্সা করা ভাল এবং জ্বর ঠোসা হলে কি করা উচিত জেনে তা করা উচিত।
নিচে কয়েকটি জ্বর ঠোসা ভালো করার চিকিৎসা দেখে নিনঃ
অ্যান্টিভাইরাল ক্রিমঃ অ্যান্টিভাইরাল ক্রিমগুলি জ্বর ঠোসা তাড়াতাড়ি ঠিক করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাক্স, ভাইরক্সি, অ্যাসেরাক্স, নোভাইরাক্স, সিমপ্লোভির, ভাইরুনিল জোভিরাক্স এবং সোথেলিপ খুব ভালো কাজ করে। একজন ব্যক্তি ৫ দিনের জন্য প্রতি ২-৩ ঘন্টায় আক্রান্ত স্থানে ক্রিমটি ব্যবহার করতে পারে।
মৌখিক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধঃ জ্বর ঠোসা ভালো করার জন্য আপনারা মুখেও ঔষধ খেতে পারেন। প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন এর মত ঔষধ খেতে পারেন। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের কিছু উদাহরণ হলঃ
- ভ্যালাসাইক্লোভির (ভালট্রেক্স)
- অ্যাসাইক্লোভির (জোভিরাক্স)
- ফ্যামসিক্লোভির (ফ্যামভির)
একজন ডাক্তার এই জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন গুলোর মধ্যে একটি আপনাকে খেতে বলতে পারেন। যদি একজন ব্যক্তির রোগ প্রতরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাহলে নিয়মিত ঔষধ খেতে পারে। একজন ব্যক্তি দিনে একবার বা দুইবার ওষুধগুলি নিতে পারবেন।
ব্যাথা থেকে মুক্তির ঔষধঃ কিছু ব্যথানাশক ঔষধ এ বেনজোকেইন বা লিডোকেন থাকে। এগুলো জ্বর ঠোসা ভালো করতে পারেনা কিন্তু ব্যথা কমাতে পারে। জ্বর ঠোসার ব্যথা কমানোর জন্য ঔষধ হলঃ
- ওরাজেল
- ব্লিস্টেক্স
- সাইমেক্স
- আনবেসোল
- এর মধ্যে রয়েছে আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন এর মতো ওষুধ।
জ্বর ঠোসার জন্য প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার
জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন না নিয়ে জ্বর ঠোসার ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আমরা আমদের ঘরে প্রাকৃতিক উপায়ে কিছু চিকিৎসা করা যেতে পারে। জ্বর ঠোসা সারানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিচে দেখুনঃ
- প্রতি ঘন্টায় জ্বর ঠোসার যায়গায় ভেজানো টি ব্যাগ দিয়ে রাখতে পারেন
- মিশ্রিত জেরানিয়াম, ল্যাভেন্ডার বা চা গাছের তেল দিয়ে জ্বর ঠোসার যায়গায় মালিশ করতে পারেন
- পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে যাতে ফেটে যাওয়া রোধ করা যায়
- জ্বর ঠোসায় বরফ ব্যবহার করতে পারেন এতে ব্যথা কমে যায় কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য না
- একটা গবেষণা থেকে দেখা যায় লেবু মলম কিছু ক্ষেত্রে হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে
- এল-লাইসিন হল একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা জ্বর ঠোসা ভালো হতে সাহায্য করে
- আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে জ্বর ঠোসার ব্যথা কমায় এবং জ্বর ঠোসা ভালো করতে সাহায্য করে
জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন - শেষ কথা
জ্বর ঠোসা ব্যথাদায়ক হতে পারে এবং কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু অনেক লোক এর কারণে জটিলতা অনুভব করে না এবং জ্বর ঠোসা সারানোর ঘরোয়া উপায় এ চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতেই তার এই রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের যদি জ্বর ঠোসা হয় তাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার হতে পারে। আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন ও জ্বর ঠোসা কোথায় হয় সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন তাই জ্বর ঠোসা হলে ভয় না পেয়ে সাবধান হন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url