রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা
রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা
অনেক সময় আমাদের রোজা রেখে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আমরা অনেকেই রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা? এ বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা। আমরা অনেকেই মনে করি রোজা রেখে রক্ত দান করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা? বিষয়টি সম্পর্কে জানা উচিত।
আরো পড়ুনঃ কোন রোগের কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
রোজা অবস্থায় যদি শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায় তাহলে রোজা ভাঙবে না একইভাবে যদি সিরিঞ্জ দ্বারা রক্ত বের করা হয় তাহলেও রোজা ভাঙবে না। রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না। তবে শারীরিকভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে দুর্বল হয় যে রক্ত দিলে সে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে তাহলে তার জন্য রোজায় রক্ত না দেওয়াই উত্তম।
কারণ রমজান মাসে রোজা হলো ফরজ। যদি রক্ত দেওয়ার কারণে আমাদের রোজার কোন ক্ষতি হয় অর্থাৎ রক্ত দেওয়ার ফলে আমরা যদি রোজা করতে না পারি তাহলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই যদি জরুরি না হয়। হযরত আকরামা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ হজের জন্য ইহারাম বাধা অবস্থায় শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন। {বোখারী শরীফঃ ১৯৩৮}
তাছাড়া রক্তদান একজন রোগীর সেবার অন্তর্ভুক্ত। রোগীকে সেবা করা একজন মুসলিমের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কারণ পবিত্র কোরআনে আছে যে ব্যাক্তি কোন মানুষের জীবন রক্ষা করল সে যেন সম্পূর্ণ মানবজাতিকে রক্ষা করল। আপনি যদি ভেবে থাকেন রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভেঙ্গে যায় তাহলে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে
আমরা অসুস্থ হলে অনেক সময় আমাদের রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে রমজান মাসে যদি আমরা অসুস্থ হয় তাহলে রোজা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করে থাকি। অনেকেই রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে কিনা? এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। আমরা জানি যে রোজা হল প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজা পালন করা অবস্থায় রোগের ওষুধপত্র সেবন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
এই পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই শরীর থেকে রক্ত বের করতে হবে। কেননা ডাক্তার রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের রোগ নির্ণয় করে থাকে। পরীক্ষা করার জন্য সামান্য রক্তের প্রয়োজন হয়। শিঙ্গা লাগানোর মত এর কোন প্রভাব শরীরে দেখা যায় না। তাই এখানে রোজা নষ্ট হওয়ার মত কোন বিষয় নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত রোজা ভঙ্গের জন্য শরীয়ত সম্মত দলিল না পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হয়েছে এটা বলা যাবে না।
যেহেতু রক্ত পরীক্ষার জন্য সামান্যতম রক্তের প্রয়োজন হয় তাই সামান্য রক্ত বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে এমন কোন দলিল পাওয়া যাবে না। যেহেতু রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগের বেশি রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। সাধারণত রোজা রাখা অবস্থায় যদি রক্ত দেওয়া হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এরকম চিন্তা-ভাবনা থেকে অনেকেই রক্ত দিতে চাই না।
যার কারণে রোগীকে বিভিন্ন রকম জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। মূল কথা হচ্ছে রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোন ডায়াবেটিস রোগী অথবা অন্য কোন জটিল রোগী রক্ত দিয়ে থাকে তাহলে এরকম অবস্থায় রক্ত দিলে কখনো রোজা ভঙ্গ হবে না। রোজা রাখা ওষুধপত্র খাওয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করা নিয়ে অনেকের মনে বিভিন্ন রকমের সংশয় থাকে। আশা করি রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার হতে পেরেছেন।
রোজা রেখে কি কি করা যাবে না
রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা? বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। রোজা রেখে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে যেগুলো করা যায় না। রোজা রাখা অবস্থায় যদি আমরা এই কাজগুলো করি তাহলে আমাদের রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে আল্লাহতালার কাছে রোজা কবুল হবে না। তাই একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে রোজা রেখে কি কি করা যাবে না? তা জানতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম - শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের উপকারিতা
শরীয়তে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো রোজা রাখা অবস্থায় বৈধ নয় অর্থাৎ সেই কাজগুলো করা যাবে না যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা যাবে না স্ত্রী সঙ্গম করা যাবে না এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "তোমরা সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পানাহার কর, অতএব রাত আসার আগ পর্যন্ত রোজা পালন কর। মসজিদে যখন তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সঙ্গত থেকে বিরত থাকো"{ সুরা বাকারাঃ ১৮৭}
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা রোজা পালনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে পানাহার এবং স্ত্রী সঙ্গম করা যাবে না। তবে ভুলক্রমে যদি কেউ খেয়ে অথবা পান করে থাকে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না।
রোজা রেখে কি কি করা যাবে নাঃ
১। রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ জাতীয় কোন তরল শিরাপথে গ্রহণ করা যাবে না।
২। রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু খাওয়া যাবে না।
৩। ফরজ গোসল করার সময় গড়গড়া ও নাকের একদম ভেতরে পানি পৌঁছানো যাবে না। স্বাভাবিকভাবে কুলি করতে হবে এবং নাক পরিষ্কার করতে হবে।
৪। সিগারেট বিড়ি ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
৫। রোজা রাখা অবস্থায় কখনো স্বামী স্ত্রী সহবাস করা যাবে না।
৬। রোজা রাখা অবস্থায় কখনো মুখ দিয়ে ওষুধ সেবন করা যাবে না একই ভাবে কারণ ও নাক অথবা মলদ্বার দাড়াও ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না।
৭। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেউ যদি হস্তমৈথুন করে এবং সেখান থেকে বীর্যপাত হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
রক্ত দিলে কি ওযু ভাঙ্গে
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে। কেউ যদি রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দেয় তাহলে এতে রোজার কোন ধরনের ক্ষতি হবে না। অনেক সময় আমরা অজু করে থাকি সব সময় পাক পবিত্র থাকার জন্য। এ সময় যদি আমরা অজু করা অবস্থায় রক্ত দিয়ে থাকি তাহলে রক্ত দিলে কি ওযু ভাঙ্গে? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে।
কারো শরীর থেকে যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় রক্ত বের হয় তাহলে সেটা নাপাক অপবিত্র বলে গণ্য হবে এবং যার শরীর থেকে প্রবাহিত রক্ত বের হলো তার অজু ভেঙ্গে যাবে। তাহলে আমরা বলতে পারি যে কেউ যদি রক্ত দেয় তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। ইব্রাহিম নাখয়ি রহঃ বলেন, কোন ব্যক্তি যদি থুথু ফেলে এবং থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে লক্ষ্য করবেন লাল বর্ণের ওপর শুভ্রতা প্রাধান্য পেয়েছে নাকি শুভ্রতার উপর লাল বর্ণের প্রাধান্য বেশি।
যদি লাল বর্ণ প্রাধান্য পায় তাহলে ওজু করতে হবে। আর শুভ্রতা প্রাধান্য পেলে ওজু করতে হবে না। কেউ যদি স্বেচ্ছায় শরীর থেকে রক্ত বের করে তাহলে আবশ্যিকভাবে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। তাকে নামাজ পড়ার জন্য আবার প্রথম থেকে ওযু করতে হবে। আশা করি রক্ত দিলে কি ওযু ভাঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনাঃ উপসংহার
রক্ত দিলে কি ওযু ভাঙ্গে? রোজা রেখে কি কি করা যাবে না? রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে, রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা? উক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয় গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।
আরো পড়ুনঃ জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে। সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। কারন আমাদের এই আর্টিকেলে নিয়মিত এ ধরনের পোস্ট প্রকাশ করা হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url